Monday, 30 November 2015

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন - সুভাষ বিশ্বাস

প্রকল্পের বিষয় : নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন
- সুভাষ বিশ্বাস,
ইতিহাস বিভাগ,
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়



প্রথম পর্ব
 
সূচনা :µ আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞান, শিল্পায়ন, নগরায়ণ প্রভৃতির দ্রুত অগ্রগতি প্রসার ঘটছে।  মানুষ তার সীমাহীন চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে পরিবেশের উপর নির্দয় শোষণ চালাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের জলভা-ার, বায়ুম- দূষিত হয়ে পড়ছে। পরিবেশের উপাদানগুলি এত দ্রুত ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে মানব তথা জীবজগতের অস্তিত্ব লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একান্তভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনজীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিংশ শতকে পরিবেশের সুরক্ষার দাবিতে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দক্ষিণ ভারতে ১৯৮০- দশকে শুরু হওয়া নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন।
 
প্রকল্পের বিষয় : আমার প্রকল্পের বিষয় হলনর্মদা বাঁচাওµ আন্দোলন পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে ছড়িয়ে পড়া জন-সচেতনতার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
 
প্রকল্পেরµ উদ্দেশ্য : আমার বর্তমান প্রকল্পটি রচনার পশ্চাতে বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।  নর্মদা নদীর উপর অনেকগুলি বাঁধ নির্মাণের ফলে পরিবেশের কতটাŒএগুলি হলনর্মদা প্রকল্প এই অঞ্চলের মানুষেরক্ষতির সম্ভাবনা আছে তা বিচার করা।   পরিবেশ সুরক্ষার উদ্দেশ্যেŽজীবনজীবিকার কতটা ক্ষতি হবে তা উপলব্ধি করা।   নর্মদাগড়ে ওঠা নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করা।   নর্মদাপ্রকল্পের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ব্যাপ্তি খুঁজে বের করা।   নর্মদা বাঁচাওবাঁচাও আন্দোলনে মেধা পটেকরের ভূমিকার মূল্যায়ন করা।  আন্দোলন ভারতের পরিবেশ আন্দোলনকে কতটা প্রভাবিত করেছে তা অনুসন্ধান করা।  আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই আন্দোলন কতটা প্রভাব ফেলেছে তা অনুসন্ধান করা প্রভৃতি।
 
প্রকল্পের গুরুত্ব : আমার বর্তমান প্রকল্পটির বিভিন্নµ  নর্মদা তার উপনদীগুলির উপর বাঁধ নির্মাণের সপক্ষেŒগুরুত্ব রয়েছে। যেমন-   সরকারী যুক্তিরসরকারের যুক্তিগুলি কী ছিল তা প্রকল্পটি থেকে জানা গেছে।  বিপক্ষে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনকারীদের যুক্তিগুলি কী ছিল তা- প্রকল্পটির  নর্মদা প্রকল্প নর্মদা উপত্যকার পরিবেশেরŽদ্বারা বিচার করা সম্ভব হয়েছে।   নর্মদা উপত্যকায়কতটা ক্ষতি করেছে তা প্রকল্পটি থেকে জানা সম্ভব হয়েছে।  বসবাসকারী সাধারণ কৃষক আদিবাসীদের জীবনজীবিকাকে নর্মদা প্রকল্প কটতা  নর্মদা প্রকল্পেরপ্রভাবিত করেছে তা প্রকল্পটি থেকে স্পষ্ট হয়েছে।  বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠার বিভিন্ন কারণগুলি একল্পটি থেকে জানা গেছে।  পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলন সাধারণ মানুষকে কতটা সচেতন করতে পারে তা প্রকল্পটি থেকে অনুধাবন করা গেছে।
 
কর্ম পরিকল্পনা : আমি প্রথমে স্বাধীন ভারতেরµ পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে কোনো একটি আন্দোলন সম্পর্কে প্রকল্প রচনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করি। এরপর এবিষয়ে আমি আমাদের বিদ্যালয়ের অর্থা নদীয়া জেলারদত্তপুলিয়া ইউনিয়ন একাডেমি ফর গার্লস’-এর ইতিহাসের শিক্ষিকা শ্রীমতি সঞ্চিতা দাস মহাশয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তাঁর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করেছি। এই আলোচনার ভিত্তিতে আমিনর্মদা বাঁচাও আন্দোলনবিষয়ে প্রকল্প রচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। প্রকল্পটি Œবাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে আমি বেশকিছু কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করি। যেমন- নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন-সহ বিভিন্ন পরিবেশ-সংক্রান্ত আন্দোলন সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য আমি আমাদের বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ Ž বইগুলি থেকে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করি। করি।  নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, অগ্রগতি পরিণাম সম্পর্কে বিষদে  ইন্টারনেট থেকে আমার প্রকল্পটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যজানার চেষ্টা করি।   প্রকল্পটির বিভিন্ন দিকগুলি কয়েকটি পর্বে ভাগ করার পরিকল্পনাসংগ্রহ করি।   মানচিত্রে নর্মদা নদীর প্রবাহ পথ এবং নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন ছড়িয়েকরি।   নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মেধা পটেকর,পড়া অঞ্চল চিহ্নিত করি।   থার্মোকল দিয়েঅরুন্ধতী রায় প্রমুখের প্রতিকৃতি জল রঙ দিয়ে অঙ্কন করি।  নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের লোগোটি তৈরি করি।

দ্বিতীয় পর্ব
 
তথ্য সংগ্রহ : ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনশীর্ষক প্রকল্প রচনার জন্য আমি বিভিন্ন বইপত্রের সহায়তা নিয়েছি।µ
(
) প্রকল্পটি রচনায় আমি যেসব বইপত্রের সহায়তা নিয়েছি সেগুলি হলÑ
 
জীবন মুখোপাধ্যায় সুভাষ বিশ্বাস রচিতছায়া ভারত বিশ্বের ইতিহাস’ (দ্বাদশ শ্রেণি),Œ
 
কাজি আব্দুল রৌফ শেখ মহম্মদ ইলিয়াস রচিতপরিবেশ সম্পদ’,
 
. গৌতম দেব রচিতপরিবেশ দূষণ’,Ž
 
দিনকর শুক্লা রচিত Ô Verdict of NarmadaÕ,
 
অ্যানড্রিউ রাওয়েল রচিতGreen Backlash: Global Subversion of the Environmental Movement,
 
রবিন হিউলেট রচিত ‘Narmada Bachao Andolon’
উপরোক্ত বইপত্র ছাড়াও আমাদের রুকনপুর উচ্চ বিদ্যালয় (.মা.)-এর গ্রন্থাগার, আমাদের গ্রামীণ গ্রন্থাগাররুকনপুর সাধারণ গ্রন্থাগার’, বহরমপুর শহরে অবস্থিত মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার প্রভৃতি গ্রন্থাগার থেকে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কিছু বইপত্রে সহায়তা নিয়েছি।
(
) আমি যেসব পত্রপত্রিকা থেকে আমার প্রকল্পের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছি সেগুলি হলÑ
 
আনন্দবাজার পত্রিকা
 
দেশ
 
বর্তমানপত্রিকা
(
) বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও আমার প্রকল্পটির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এই ওয়েবসাইটগুলি হল
http://www.narmada.org/resources/books/silenced_rivers.html
http://www.ecoindia.com/education/narmada-bachao-andolan.html
http://www.lokashakti.org/encyclopedia/groups/143-narmada-bachao-andolan
http://www.rightlivelihood.org/narmada.html

µ তথ্য বিশ্লেষণ : নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন হল আদিবাসী, কৃষক, বিভিন্ন পরিবেশকর্মী মানবাধিকারকর্মীদের নিয়ে গঠিত একটি সামাজিক আন্দোলন যে আন্দোলনে নর্মদা নদীর উপর বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ করা হয়েছিল। এই আন্দোলন সম্পর্কে যথেষ্ট পড়াশোনা করে আমি নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলাম। যেমন-
 
. নর্মদা প্রকল্প নর্মদা নদী হল ভারতের: পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে দীর্ঘতম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নর্মদাকু- থেকে ৎপত্তি লাভ করে এই নদী দীর্ঘ ১৪৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আরবসাগরে গিয়ে পড়েছে। এই নদীর দীর্ঘ উপত্যকা অঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির প্রচুর মানুষ বসবাস করে। গুজরাট মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে এবং বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নর্মদা প্রকল্প (The Narmada Valley Development plan) গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের দ্বারা পরবর্তী ২৫ বছরের মধ্যে নর্মদা নদী তার বিভিন্ন উপনদীর উপর ৩০টি বৃহ বাঁধ, ১৩৫টি মাঝারি বাঁধ এবং প্রায় ৩০০০টি ছোটো বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূল নদীটির উপর ১০টি বড়ো বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় আনুমানিক ৪০,০০০ কোটি টাকা।
 
. প্রকল্পের উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট কয়েকটি: উদ্দেশ্যে সরকার নর্মদা প্রকল্প হাতে নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া  নর্মদা উপত্যকার বিস্তীর্ণŒহয় যে নর্মদা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে-   নর্মদাঅঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে নদীবাঁধের জল সেচের কাজে ব্যবহার করা যাবে।  Žনদীবাঁধের জল¯্রােত থেকে ১৪৫০ মেগাওয়াট জলবিদ্যু ৎপাদন করা সম্ভব হবে।  নদী উপত্যকা অঞ্চলে বন্যা প্রতিরোধ করে মানুষ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা  অন্তত কোটি মানুষের জন্য পাণীয় জলের ব্যবস্থা করা যাবেসম্ভব হবে।  প্রভৃতি।
 
. প্রকল্পের প্রভাব মধ্যপ্রদেশ গুজরাটের উপর দিয়ে: প্রবাহিত এই নদী উপত্যকায় বসবাসকারী অসংখ্য আদিবাসী কৃষক পরিবার এই নদীর  নর্মদা নদীর উপর গুজরাটেসর্দার সরোবরŒউপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল ছিল।  বাঁধ এবংনর্মদা সাগরবাঁধ নামে দুটি বৃহ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বাঁধ দুটি নির্মাণের ফলে প্রায় ১০ লক্ষ দরিদ্র কৃষক আদিবাসী  প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে নদীবাস্তুচ্যুত হয় কর্মহীন হয়ে পড়ে।  Žউপকূলের প্রচুর গাছপালা কেটে ফেলা হয়। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।  নদী উপকূলের বনভূমি ধ্বংসের ফলে এখানকার প্রচুর পশুপাখি মারা যায়, বাকিদের  ধর্মভীরু হিন্দুদের কাছে নর্মদা হল পবিত্রঅস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়ে।  নদী। এই নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের ফলে তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে।
 : . বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বাবা আমতে- নেতৃত্বে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা শুরু হয়। তিনি নর্মদা আন্দোলনকেজাতির মুখবলে অভিহিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে দ্রুত জনমত গড়ে উঠতে থাকে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নর্মদা উপত্যকায় বসবাসকারী পরিবারগুলি খুবই উপকৃত হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ সরকারের কথায় কর্ণপাত না করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। আন্দোলনকারীদের উপর দমনপীড়ন শুরু হলে আন্দোলন বরং আরও তীব্র হতে থাকে।
. আন্দোলনকারীদের বক্তব্য নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনকারীরা: নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে দাবি করে যে এই প্রকল্প  কৃষিজমিতে জলসেচের ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি ঘটবে না। Œরূপায়িত হলে-   এক অঞ্চলের বন্যা প্রতিরোধ করতেŽসামান্য পরিমাণ জলবিদ্যু ৎপাদিত হবে। প্রায় ৮৫ হাজার পরিবারগিয়ে প্রতিবেশী অন্য অঞ্চল প্লাবিত হবে।  সরকারি কোশাগারের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এইবাস্তুচ্যুত হবে।  প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে।  
. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের সূচনা : কিছুদিনের মধ্যে পরিবেশ কর্মী মেধা পটেকর নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে দেন। তিনি তাঁর পি.এইচ.ডি.- গবেষণার কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ের। তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা অহিংস পথে মিছিল করে। গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ মহারাষ্ট্রের অন্তত ১০ হাজার গ্রামবাসী এই মিছিলে যোগ দেয়। মেধা পটেকরের নেতৃত্বে নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি সংস্থা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে। এভাবে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দেনর্মদা বাঁচাও আন্দোলন-এর সূচনা হয়।  মেধা পটেকর টানা ৩৬ দিন ব্যাপী নর্মদা উপত্যকা অঞ্চলে পদযাত্রা করেন।
  . অনশন নর্মদা নদীকে বাঁধমুক্ত: রাখার উদ্দেশ্যে মাঠে-ময়দানে নেমে জনতা তীব্র আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমে প্রচারকার্য, অনশন, পদযাত্রা প্রভৃতির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। পুলিশি দমননীতিও আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ব্যর্থ হয়। আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনের প্রধান নেত্রী মেধা পটেকরকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়। তথাপি তাঁর নেতৃত্বে অহিংস উপায়ে অনশন সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালিয়ে যায় ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বাঁধ নির্মাণের সমর্থকরা আন্দোলকারীদের উপর আক্রমণ চালায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে মেধা পটেকর দীর্ঘ ২১ দিন অনশন করেন।
 
. পরিণতি নর্মদা প্রকল্প বানচাল করার উদ্দেশ্যে: আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে একাধিক মামলাও করা হয়। ফলে নর্মদা প্রকল্পের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে একাধিক বার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সুপ্রিম কোটের হস্তক্ষেপে সর্দার সরোবর বাঁধের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধও রাখা হয়। অবশেষে পরিবেশের সুরক্ষা, বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন, দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয়ে আন্দোলনকারীরা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালে সরকার তা মেনে নিয়ে আন্দোলন সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া সর্দার সরোবর বাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
 
. আন্দোলনের: ব্যাপ্তি চলচিত্র নির্মাতা আলি কাজিমি নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের উপর ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দেনর্মদা: ভ্যালি রাইজেসনামে একটি সিনেমা তৈরি করেন। এই সিনেমায় ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সপ্তাহ ব্যাপী সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। অপর চলচিত্র নির্মাতা আনন্দ পাটোয়ারধান ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে নর্মদা ডাইরিনামে একটি সিনেমা তৈরি করেন। বুকার পুরস্কার বিজয়িনী অরুন্ধতী রায়, মুম্বইয়ের চিত্র তারকা আমীর খান এবং আম আদমি পার্টির অলোক আগরওয়াল এই আন্দোলনে সমর্থন জানান। এই আন্দোলন ক্রমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমর্থন লাভ করে।
 
সিদ্ধান্ত : নর্মদা বাঁচাওµ আন্দোলন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে  নর্মদা উপত্যকায় বসবাসকারী যে সকলŒবিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে।  পরিবার প্রকল্পের প্রয়োজনে নিজেদের জমি ছেড়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণের সরকারী অর্থ  এইনিয়েছে তাদের উপর নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনকারীদের আক্রমণ নেমে এসেছে।  বাঁধ নির্মাণের ফলে নর্মদা উপত্যকায় কৃষির উন্নতি, পাণীয় জলের সরবরাহ, বিদ্যু ৎপাদন প্রভৃতির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা অহেতুক বাঁধ নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করেছে।

তৃতীয় পর্ব
 
পাঠেরµ সীমাবদ্ধতা : প্রকল্পটি রচনা করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েকটি  বৃহ প্রকল্প নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনŒসীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেছি। যেমনশীর্ষক প্রকল্পটি যথেষ্ট বৃহৎ। এটি রূপায়ণের জন্য যতটা সময়ের দরকার ছিল তা বিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয়ের পড়াশোনার ফাঁকে বের করা সম্ভব হয়নি।  পরস্পর-বিরোধী আলোচনা মার্কসবাদী চিন্তাবিদ উদারতান্ত্রিক চিন্তাবিদগণ দ্বিমেরু বিশ্বের বিষয়টি আলোচনা করতে গিয়ে যেভাবে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেছেন তা অনেক সময়ই পরস্পর-বিরোধী বলে আমার মনে হয়েছে। ফলে বিষয়টি আমার  তথ্যের অভাব দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভবŽকাছে অনেকটা জটিল হয়ে গিয়েছে।  সম্পর্কে যতটা তথ্য পাওয়া গেছে সে তুলনায় দ্বিমেরু বিশ্বের দীর্ঘ কার্যকলাপ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে দ্বিমেরু থেকে একমেরু বিশ্বে  চিত্রাঙ্কন প্রকল্পেররূপান্তরের বিষয়টি বোঝাতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।  প্রয়োজনীয় চিত্রগুলি অঙ্কনের সময় সেগুলি যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য বলে মনে হয়েছে।
 
উপকরণ : বর্তমান প্রকল্পটি রূপায়ন করতে গিয়ে আমি নি¤œলিখিতµ  স্কেল, তুলি,  রঙ, Ž পেনসিল,  কার্ড বোর্ড, Œউপকরণগুলি ব্যবহার করেছি-   আঠা ইত্যাদি। প্লাস্টার অব প্যারিস, মোম,
 
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :µ আমি বিভিন্ন ব্যক্তির সহায়তা নিয়েদ্বিমেরু বিশ্ব থেকে একমেরু বিশ্বে  আমার বিদ্যালয়েরŒরূপান্তরশীর্ষক বর্তমান প্রকল্পটি রচনা করেছি।  ইতিহাসের শিক্ষক শ্রীদিব্যেন্দু মৌলিক মহাশয় আমার প্রকল্প রচনার কাজে  নদীয়া জেলার চাকদহ শিলিন্দা পানুগোপালযথেষ্ট সহায়তা করেছেন।  উচ্চবিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক শ্রীপদ - মহাশয় আমাকে প্রকল্পটির বিষয়ে  চাকদহ বসন্ত স্মৃতি পাঠাগারের পূর্বতন এবংŽবিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছেন।  কৃষ্ণনগর টাউন লাইব্রেটিরর বর্তমান গ্রন্থাগারিক শ্রীসঞ্জিত দত্ত আমাকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছেন।
 
চিত্র তালিকা : আমি বিভিন্ন বইপত্র থেকেµনর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ছবি সংগ্রহ করেছি। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া বেশ কিছু ছবি আমি আমার প্রকল্প রচনায় ব্যবহার করেছি। এবিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হল-
 
http://en.wikipedia.org/wiki/Narmada_River

 
ছাত্র / ছাত্রীর স্বাক্ষর - - - - - - - - - - - - - - - - -
 
শিক্ষক / শিক্ষিকার স্বাক্ষর - - - - - - - - - - - - - - -

======================================================
======================================================


লেখক পরিচিতি
নাম         :           সুভাষ বিশ্বাস
পরিচিতি     :           অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজ, কলকাতা
মোবাইল নং  :          ৯১৫৩০২৮২২৪
ইমেল        :           subhasbiswaschak@gmail.com
 




5 comments:

  1. ঠান্ডা লড়াই কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন এবং জনপ্রিয় করেন ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়াল্টার লিপম্যান, ১৯৪৭ সালে

      Delete